শবে বরাত এর আমল ২০২৫

শবে বরাত এর আমল ২০২৫

শবে বরাত ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ একটি রাত। আরবি ক্যালেন্ডারের শা’বান মাসের ১৪ তারিখের রাতকে শবে বরাত বা ‘লায়লাতুল বরাত’ বলা হয়, যার অর্থ মুক্তির রাত। এই রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তির দরজা উন্মুক্ত করে দেন। ২০২৫ সালে শবে বরাত পালিত হবে ২৫ ফেব্রুয়ারি (১৪ শা’বান, ১৪৪৬ হিজরি) রাতে। এই রাতের ফজিলত, আমল ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এই ব্লগে।

শবে বরাতের ফজিলত

শবে বরাত নিয়ে কুরআনে সরাসরি কোনো উল্লেখ নেই, তবে হাদিসে এই রাতের বিশেষ গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

১. রহমত ও মাগফিরাতের রাত:
আবু মুসা আশ’আরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন—
“নিশ্চয়ই আল্লাহ শাবান মাসের ১৫তম রাত আসলে দুনিয়ার নিকটতম আকাশে অবতরণ করেন এবং কুল্লু মুশরিক ও মুশাহিন (অর্থাৎ মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী) ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।” (ইবনে মাজাহ: ১৩৯০)

২. তাকদির নির্ধারিত হয়:
অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ মনে করেন, এই রাতে এক বছরের ভাগ্য নির্ধারিত হয়, যদিও এটি নিয়ে ভিন্ন মতও রয়েছে। তবে ইসলামে দোয়ার মাধ্যমে তাকদির বদলানোর সুযোগ আছে, তাই শবে বরাতে বেশি করে দোয়া করা উচিত।

৩. গুনাহ মাফের সুযোগ:
হাদিস অনুযায়ী, যারা আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে তওবা করে, তাদের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। তবে যাদের অন্তরে বিদ্বেষ বা হিংসা রয়েছে, তাদের ক্ষমা করা হয় না।

শবে বরাতের করণীয় আমল

এই রাতে কীভাবে ইবাদত করা উচিত এবং কোন আমল বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবাদের আমল অনুসরণ করাই উত্তম।

১. নফল নামাজ আদায়

এই রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা যেতে পারে। নির্দিষ্ট কোনো রাকাতের সংখ্যা নেই, তবে দুই রাকাত করে নামাজ পড়া যায়।

২. কুরআন তিলাওয়াত

শবে বরাতে কুরআন তিলাওয়াত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এই রাতে সূরা ইয়াসিন, সূরা দুখান, সূরা মুলক, সূরা ইখলাস বেশি বেশি পড়া উত্তম।

৩. দোয়া ও ইস্তিগফার

এটি মাগফিরাতের রাত, তাই আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা উচিত।

🔹 গুনাহ মাফের দোয়া:
“اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني”
(অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, আমাকে ক্ষমা করে দিন।)

🔹 রিজিক বৃদ্ধির দোয়া:
“اللهم ارزقني رزقًا حلالًا طيبًا واسعًا”
(অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে হালাল, পবিত্র ও প্রশস্ত রিজিক দান করুন।)

৪. নফল রোজা রাখা

শাবান মাসের ১৫ তারিখে নফল রোজা রাখা মুস্তাহাব। রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন (সহিহ বুখারি)।

৫. কবর জিয়ারত করা

এই রাতে কবর জিয়ারত করা মুস্তাহাব। রাসুলুল্লাহ (সা.) শবে বরাতে কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া করতেন (মুসনাদে আহমদ)।

শবে বরাতে যেসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত

অনেক অঞ্চলে শবে বরাত নিয়ে নানা কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। তাই আমাদের এসব থেকে সতর্ক থাকতে হবে।

🔸 ১. আতশবাজি ও হৈচৈ: শবে বরাত ইবাদতের রাত, আনন্দ-উৎসবের নয়।

🔸 ২. বিশেষ হালুয়া বা খাবারের বাধ্যবাধকতা: শবে বরাতে নির্দিষ্ট কোনো খাবার খাওয়ার বিধান নেই।

🔸 ৩. নির্দিষ্ট ১০০ রাকাত নামাজের ধারণা: শবে বরাতের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক নামাজের কোনো হাদিস নেই।

🔸 ৪. অলৌকিক ঘটনা বিশ্বাস করা: অনেকে মনে করেন, এই রাতে বিশেষ কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটে, যা কুরআন-হাদিসে নেই।

শবে বরাত রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তির রাত। এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত, তওবা ও দোয়া করা উচিত। তবে শবে বরাতের সাথে যুক্ত কুসংস্কার ও ভিত্তিহীন রীতি থেকে দূরে থাকা জরুরি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই রাতের পূর্ণ ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন!

Post Comment

You May Have Missed