শবে বরাত কবে জানাল ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের পবিত্র শবে বরাত ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দিবাগত রাতে পালিত হবে। শবে বরাত, যা লাইলাতুল বরাত নামেও পরিচিত, ইসলাম ধর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত হিসেবে বিবেচিত হয়। এই রাতে মুসলমানরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা, ইবাদত-বন্দেগি এবং বিশেষ দোয়া করে থাকেন।
শবে বরাত ফারসি শব্দ, যেখানে ‘শব’ অর্থ রাত এবং ‘বরাত’ অর্থ মুক্তি। এই দুটি শব্দ মিলে ‘মুক্তির রাত’ অর্থ প্রকাশ করে। আরবি ভাষায় একে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বলা হয়, যার অর্থ শাবান মাসের মধ্যরাত। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, এই রাতে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে তার বান্দাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করেন।
হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন। সেই রাতে তিনি মুশরিক এবং অন্য ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।’
শবে বরাতের রাতে মুসলমানরা নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির, দোয়া এবং অন্যান্য ইবাদতে মশগুল থাকেন। অনেকে এই রাতে ৮ রাকাত শাফে এবং ৩ রাকাত বিতর নামাজ আদায় করে থাকেন। এছাড়া, মৃত আত্মীয়-স্বজনের জন্য দোয়া করা, দান-সদকা করা এবং আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত কামনা করা হয়।
বাংলাদেশ সরকার শবে বরাত উপলক্ষে ১৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে, যাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই রাতের ইবাদত-বন্দেগিতে অংশ নিতে পারেন।
শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’
তবে, শবে বরাতের ইবাদত সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা নিয়ম হাদিসে পাওয়া যায় না। তাই, এই রাতে ইবাদত-বন্দেগি করতে গিয়ে কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি বা নতুন প্রথা সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকা উচিত। সাধারণ নফল ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির এবং দোয়ার মাধ্যমে রাতটি অতিবাহিত করা উত্তম।
শবে বরাতের আরেকটি প্রথা হলো হালুয়া-রুটি তৈরি করে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বিতরণ করা। যদিও এটি ইসলামের মূল শিক্ষার অংশ নয়, তবে এটি সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির একটি উপায় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে, এই প্রথা পালন করতে গিয়ে অপচয় বা অহংকার থেকে বিরত থাকা উচিত।
শবে বরাতের পরের দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব (পছন্দনীয়) হিসেবে বিবেচিত হয়। হাদিসে এসেছে, নবী করিম (স.) শাবান মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন। তাই, শবে বরাতের পরের দিন রোজা রাখা সুন্নত হিসেবে গণ্য করা হয়।
শবে বরাতের মূল বার্তা হলো আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা, আত্মশুদ্ধি এবং ইবাদতের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি অর্জন করা। এই রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন এবং তাদের দোয়া কবুল করেন। তাই, আমাদের উচিত এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে আল্লাহর নিকট নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং ভবিষ্যতে সৎ পথে চলার প্রতিজ্ঞা করা।
পরিশেষে, শবে বরাত আমাদের জন্য একটি মহিমান্বিত রাত, যা আমাদের আত্মশুদ্ধি, ইবাদত এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ প্রদান করে। আমরা যেন এই রাতের ফজিলত থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে উপকৃত হতে পারি এবং আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত অর্জন করতে পারি।
Post Comment