শবে বরাত এর জিকির
শবে বরাত ইসলামিক ক্যালেন্ডারের শা’বান মাসের ১৫তম রাত্রি, যা মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। এই রাতকে গুনাহ মাফের রাত ও বরকতময় রাত হিসেবে ধরা হয়। শবে বরাতের বিশেষ গুরুত্ব হলো, এই রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন, রিজিক বৃদ্ধি করেন এবং তাকদির নির্ধারণ করেন। তাই, এ রাতে বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া, কুরআন তিলাওয়াত এবং জিকির করা উচিত।
শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্ব
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
“যখন শা’বান মাসের পনেরতম রাত আসে, তখন তোমরা সেই রাতে ইবাদত করো এবং দিনে রোজা রাখো। নিশ্চয়ই, আল্লাহ তাআলা ওই রাতে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোনো রিযিকপ্রার্থী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দেব।’” (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)
এই রাতকে লাইলাতুল বরাআত বা মুক্তির রাতও বলা হয়। হাদিস অনুযায়ী, এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।
শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ জিকির ও আমল
শবে বরাতের রাতে বিভিন্ন ইবাদত করা যায়। তবে জিকির ও দোয়া বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই রাতে করা যায় এমন কিছু জিকির নিচে উল্লেখ করা হলো—
১. তাসবিহ ও তাহলিল
এ রাতে আল্লাহর গুণবাচক নাম ও তাসবিহ বেশি বেশি পাঠ করা উচিত। যেমন:
🔹 সুবহানাল্লাহ ওয়ালহামদু লিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার
(পরম পবিত্র আল্লাহ, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, আর আল্লাহ সর্বশক্তিমান।)
🔹 লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ও হুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন কাদির।
(আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই, তিনি এক ও অদ্বিতীয়। সমস্ত ক্ষমতা ও প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।)
এগুলো অন্তত ১০০ বার বা তার বেশি পড়া উত্তম।
২. ইস্তিগফার (গুনাহ মাফের দোয়া)
শবে বরাতে বেশি বেশি ইস্তিগফার করা উচিত, কারণ এই রাতে আল্লাহ অসংখ্য বান্দার গুনাহ মাফ করেন।
🔹 আস্তাগফিরুল্লাহ রাব্বি মিন কুল্লি জম্বিন ওয়া আতুবু ইলাইহি।
(আমি আল্লাহর কাছে সকল পাপ থেকে ক্ষমা চাই এবং তাঁর কাছে তওবা করি।)
🔹 اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني
(আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।)
(হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।)
এই দোয়াটি অন্তত ৭০ বা ১০০ বার পড়তে পারেন।
৩. দরুদ শরিফ পাঠ
শবে বরাতে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি দরুদ পাঠের বিশেষ ফজিলত আছে।
🔹 আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলে ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।
এটি কমপক্ষে ১০০ বার পড়া উত্তম।
৪. দুই রাকাত নফল নামাজ
শবে বরাতে দুই রাকাত বা তার বেশি নফল নামাজ পড়া উত্তম।
🔹 প্রথম রাকাতে: সূরা ফাতিহার পর ৩ বার সূরা ইখলাস।
🔹 দ্বিতীয় রাকাতে: সূরা ফাতিহার পর ৩ বার সূরা ইখলাস।
এভাবে প্রতি দুই রাকাতে দোয়া ও জিকির করা যেতে পারে।
৫. হালাল রিজিকের জন্য দোয়া
এই রাতে আল্লাহর কাছে রিজিক বৃদ্ধি ও বরকতের জন্য দোয়া করা উচিত।
🔹 اللهم ارزقني رزقاً حلالاً طيباً واسعاً مباركاً فيه
(আল্লাহুম্মা রযুকনি রিযকান হালালান তইয়িবান ওয়াসিয়ান মুবারাকান ফিহি।)
(হে আল্লাহ! আমাকে হালাল, উত্তম, প্রশস্ত ও বরকতময় রিজিক দান করুন।)
শবে বরাতের ইবাদত সম্পর্কে সতর্কতা
✅ যা করা উচিত:
✔ বেশি বেশি জিকির, দোয়া ও নামাজ।
✔ কুরআন তিলাওয়াত করা।
✔ নিজের ও পরিবারের জন্য দোয়া করা।
❌ যা করা উচিত নয়:
✘ বিদআত ও কুসংস্কারপূর্ণ আমল করা।
✘ একসঙ্গে মসজিদে বিশেষ আয়োজন করা (যদি তা বাধ্যতামূলক মনে করা হয়)।
✘ কোনো বিশেষ খাবার বা অনুষ্ঠানকে শবে বরাতের জন্য আবশ্যক মনে করা।
শবে বরাত এমন একটি রাত, যেখানে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন। তাই, এই রাতকে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটানো উচিত। বিশেষ করে, জিকির, ইস্তিগফার ও দরুদ শরিফ পাঠ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যেন শবে বরাতের এই বরকতময় রাতকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নিজেদের গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করি এবং হালাল রিজিক ও কল্যাণের জন্য দোয়া করি।
Post Comment