শবে বরাত সম্পর্কে জাকির নায়েক

শবে বরাত সম্পর্কে জাকির নায়েক

শবে বরাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অত্যন্ত সম্মানিত ও পুণ্যময়। এটি ইসলামী ক্যালেন্ডারের ১৪শ তারিখে পালন করা হয়, অর্থাৎ ইসলামী মাসের ১৫ তারিখে রাতটি থাকে। শবে বরাতের রাতে মুসলিমরা আল্লাহর বিশেষ রহমত ও ক্ষমা লাভের জন্য বিভিন্ন ধরনের ইবাদত এবং দোয়া করতে চেষ্টা করে থাকেন। এই রাতটি বিশেষভাবে দোয়া ও মাগফিরাত (ক্ষমা) প্রার্থনার রাত হিসেবে পরিচিত।

শবে বরাতের গুরুত্ব

শবে বরাতের রাত ইসলামে অত্যন্ত পবিত্র এবং এর মধ্যে অজস্র বরকত রয়েছে। বিশেষত, এই রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিশেষ দয়া দেখান এবং পাপীদের ক্ষমা করেন। অনেক হাদিসে এসেছে যে, এই রাতে আল্লাহ তাআলা সারা পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং তাঁর সৃষ্টির জন্য রহমত ও মাগফিরাত প্রদান করেন। তাছাড়া, এই রাতে মৃত্যু ও অন্যান্য জীবনের বিষয়াদি সম্পর্কে আদেশ হয় এবং পরবর্তী বছরের জন্য ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়।

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে, শবে বরাতের রাতটি একটি বিশেষ ধরনের নফল ইবাদতের রাত। এতে অনেক মুসলিম রাতভর নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও তাসবিহ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এই রাতটি নফল ইবাদতের জন্য এক ধরনের সুযোগ, যা আত্মশুদ্ধির জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে।

শবে বরাতের উপর জাকির নায়েকের দৃষ্টি

বিশ্বখ্যাত ইসলামিক স্কলার ড. জাকির নায়েকও শবে বরাতের গুরুত্ব সম্পর্কে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন। তার বক্তব্যে, শবে বরাতের রাতের বিশেষত্বের উপর আলোকপাত করা হয়। তিনি বলেন, ইসলামে কোনো কিছু বিশেষভাবে পালনের জন্য যদি তা সুন্নত না হয় বা কুরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে নির্দেশনা না থাকে, তবে তা সম্পূর্ণভাবে শর্তাধীন। শবে বরাতের রাতের গুরুত্ব কুরআন ও হাদিসে এসেছে, তবে এর পদ্ধতি, সময় ও বিভিন্ন রীতিনীতির বিষয়ে অনেক ভিন্নমত রয়েছে।

জাকির নায়েক এই রাতটির বিশেষত্বকে স্বীকার করেন, তবে তিনি উল্লেখ করেন যে, শবে বরাতের রাতে অতিরিক্ত আচার-অনুষ্ঠান ও রেওয়াজ, যেমন বিশেষভাবে মাজার বা কবরে যাওয়া, একে ইসলামের মূল শিক্ষার বাইরে চলে যাওয়া হতে পারে। ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হল আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরি করা এবং সেই সম্পর্কের মধ্যে কোন অনুলিপি বা মাধ্যমের প্রয়োজন নেই। তাই, তিনি শবে বরাতের রাতে সাধারণ দোয়া ও ইবাদতের প্রতি গুরুত্ব দেন এবং অযথা বিদআত বা নতুন রীতিনীতি সৃষ্টি করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেন।

শবে বরাতের দোয়া ও ইবাদত

শবে বরাতের রাতে বিশেষ ধরনের দোয়া ও ইবাদত করা হয়, যা মূলত ক্ষমা প্রার্থনার উদ্দেশ্যে করা হয়। মুসলিমরা আল্লাহর কাছে তাদের পাপের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেয় এবং পরবর্তী বছরে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য প্রার্থনা করে। এ সময় অনেকেই কোরআন তিলাওয়াত করে, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে, এবং বিভিন্ন প্রকার দোয়া ও তাসবিহ পাঠ করে থাকেন।

এই রাতে একটি বিশেষ দোয়া প্রচলিত রয়েছে, যা “اللهم اجعلنا من الذين يسيرون في الجنة” (আল্লাহুম্মা মিকনা মিনাল লাজিনা ইয়াসিরুন ফি-ল জান্না), অর্থাৎ, “হে আল্লাহ! আমাদেরকে সেসব লোকদের মধ্যে পরিণত কর, যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।”

এছাড়াও, কিছু হাদিসে এসেছে যে, শবে বরাতের রাতে মুসলিমরা তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য, আত্মীয়স্বজনদের জন্য, এবং সমাজের মানুষের জন্য দোয়া করতে পারে। এটি একটি আদর্শ রাত, যেখানে আত্মিক উন্নতি ও পরবর্তী বছরগুলোর জন্য আল্লাহর রহমত প্রার্থনা করা হয়।

শবে বরাত মুসলিম বিশ্বের মধ্যে একটি অত্যন্ত সম্মানিত রাত। যদিও এর উপর বিভিন্ন মতামত রয়েছে, তবে ইসলামের মূল শিক্ষা হলো একে একটি অতিরিক্ত ইবাদত ও দোয়ার রাত হিসেবে পালন করা, যাতে আত্মিক উন্নতি এবং আল্লাহর রহমত পাওয়া যায়। ইসলামে কোনো বিশেষ রাত বা দিনের মধ্যে ইবাদত করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও ভয়ও গুরুত্বপূর্ণ। শবে বরাতের রাতে বিভিন্ন রীতিনীতি পালন করা যেতে পারে, তবে এটি হতে হবে ইসলামের মূল শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ

Post Comment

You May Have Missed