শবে বরাত গুরুত্ব ও ফজিলত ২০২৫

শবে বরাত গুরুত্ব ও ফজিলত ২০২৫

ইসলামী পরিভাষায় শবে বরাত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত, যা বিশেষ রহমত, ক্ষমা এবং কল্যাণের জন্য সুপরিচিত। প্রতি বছর শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাতে এটি পালিত হয়, যা ২০২৫ সালে পড়বে [তারিখ উল্লেখ করুন]। এই রাতের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে অসংখ্য আলোচনা পাওয়া যায়।

শবে বরাতের অর্থ ও তাৎপর্য

‘শবে বরাত’ শব্দটি ফারসি ভাষা থেকে এসেছে, যেখানে ‘শব’ অর্থ রাত এবং ‘বরাত’ অর্থ মুক্তি বা কল্যাণ। এটি এমন একটি রাত যখন মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য অশেষ রহমত বর্ষণ করেন, গুনাহ মাফ করেন এবং তাকদির লিখেন। অনেক আলেমের মতে, এটি হলো সেই রাত, যখন আল্লাহ এক বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করেন।

শবে বরাতের গুরুত্ব ইসলামে

শবে বরাত সম্পর্কে কুরআনে সরাসরি কোনো উল্লেখ নেই, তবে কিছু ব্যাখ্যা থেকে এর তাৎপর্য উপলব্ধি করা যায়। হাদিস শরীফে এ রাতের বিশেষত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়।

হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেনঃ

“শাবান মাসের মধ্য রজনীতে আল্লাহ দুনিয়ার সবচেয়ে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, ‘কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোনো রিজিক চাওয়ার মতো আছে কি? আমি তাকে রিজিক দেব।’” (ইবনে মাজাহ)

এ ছাড়াও হাদিসে এসেছে, এই রাতে আল্লাহ অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। তবে যারা কুফরী, বিদআত, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, মদ্যপানকারী, জাদুকর, অহংকারী ও হিংসুক, তারা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।

শবে বরাতের আমল ও ইবাদত

শবে বরাতের রাতে ইবাদতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এই রাতে নিম্নলিখিত আমল করা যেতে পারে:

১. নফল নামাজ আদায় করা

শবে বরাতের রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়ার গুরুত্ব রয়েছে। দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়া যেতে পারে এবং প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস বা অন্য কোনো সূরা পড়া যেতে পারে।

২. কুরআন তিলাওয়াত

এই রাতে কুরআন তিলাওয়াত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। কুরআনের আয়াতগুলো পাঠ করলে হৃদয়ে প্রশান্তি আসে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায়।

৩. তওবা ও ইস্তিগফার করা

এই রাতে গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে খাঁটি মনে তওবা করা উচিত। ইস্তিগফার ও দোয়া করা হলে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করেন।

৪. দরুদ পাঠ ও জিকির করা

প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা ও আল্লাহর জিকির করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ইত্যাদি জিকির বেশি বেশি করা যেতে পারে।

৫. রোজার নিয়ত করা

অনেক হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন। শবে বরাতের পরদিন অর্থাৎ ১৫ শাবান রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।

শবে বরাতের ভুল ধারণা ও বিদআত

শবে বরাত নিয়ে কিছু ভুল ধারণা ও বিদআত সমাজে প্রচলিত আছে, যা এড়িয়ে চলা উচিত। যেমন:

  • আতশবাজি ও পটকা ফোটানো: এটি ইসলামে নিষিদ্ধ ও অপ্রয়োজনীয় কাজ।
  • বিশেষ মিষ্টান্ন বা খাবার তৈরি করা: যদিও খাবার তৈরি দোষের কিছু নয়, তবে একে ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা মনে করা ঠিক নয়।
  • কবর জিয়ারতে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া: কবর জিয়ারত করা ভালো, তবে এ রাতকে কেন্দ্র করে কবরস্থান ভিড় করা বাধ্যতামূলক নয়।

শবে বরাত এক মহিমান্বিত রাত, যা আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভের সুবর্ণ সুযোগ। এই রাতে আমাদের উচিত নফল ইবাদত, তওবা-ইস্তিগফার, কুরআন তিলাওয়াত ও দরুদ পাঠে মনোনিবেশ করা। তবে বিদআত ও ভুল প্রথা থেকে বিরত থেকে শুদ্ধভাবে এই রাত উদযাপন করাই প্রকৃত ইসলামী শিক্ষা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই পবিত্র রাতের বরকত ও রহমত দান করুন। আমিন।

Post Comment

You May Have Missed