শবে বরাত ২০২৫ কত তারিখে
শবে বরাত, যা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক বিশেষ ও পবিত্র রজনী হিসেবে পরিচিত, প্রতি বছর আরবি মাস শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে পালন করা হয়। এই রাতকে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে লাইলাতুল বরাত নামেও ডাকা হয়, যা অর্থাৎ ‘নির্দিষ্ট ভাগ্যের রজনী’। এই রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য ক্ষমা, রহমত এবং বরকতের দরজা খুলে দেন। শবে বরাতের রাতটি মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি আত্মশুদ্ধি, ইবাদত এবং অতীতের গোনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি বিশেষ সুযোগ।
শবে বরাত ২০২৫-এর তারিখ
২০২৫ সালে শবে বরাত পালিত হবে ১৪ মার্চ, শুক্রবার রাতে। অর্থাৎ, শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিনের শেষে সূর্যাস্তের পর এই পবিত্র রজনী শুরু হবে এবং ১৫ শাবান ফজরের নামাজের মাধ্যমে শেষ হবে। তবে চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে এই তারিখে সামান্য পরিবর্তন হতে পারে, তাই স্থানীয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা মসজিদের ঘোষণার দিকে নজর রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
শবে বরাতের তাৎপর্য
শবে বরাতের গুরুত্ব ইসলামী ধর্মীয় গ্রন্থ এবং হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে। বিশ্বাস করা হয় যে, এই রাতে আল্লাহ তাআলা স্বীয় কুদরতি খাতায় আগামী বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। কার জীবন শেষ হবে, কার রিজিক বৃদ্ধি পাবে, কে বিপদে পড়বে বা কার জীবনে সুসংবাদ আসবে—এসব বিষয় নির্ধারিত হয় এই রাতেই।
হাদিসে এসেছে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন:
“যখন শাবানের ১৫ তারিখের রাত আসে, তখন আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে এসে বলেন, ‘কোনো আছে কি ক্ষমা প্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোনো আছে কি রিজিক প্রার্থী? আমি তাকে রিজিক দেব। কোনো আছে কি বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে মুক্তি দেব।’ এই আহ্বান চলতে থাকে ফজর পর্যন্ত।” (তিরমিজি)
ইবাদত এবং রাতের করণীয়
শবে বরাতের রাতটি ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে উৎসর্গ করা হয়। মুসলিম সম্প্রদায় এই রাতে নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আযকার, এবং বিশেষ দোয়া করে থাকে। এই রাতে করণীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো:
- নফল নামাজ: অনেকে এই রাতে ১০০ রাকাত নফল নামাজ আদায় করে থাকেন। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। ইচ্ছা করলে যে কোনো সংখ্যক রাকাত নফল নামাজ পড়া যেতে পারে।
- কুরআন তিলাওয়াত: এই রাতে কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর কথা শোনার এবং তা অনুধাবন করার একটি বড় সুযোগ।
- তাওবা ও ইস্তেগফার: অতীতের গোনাহ মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে তাওবা করা শবে বরাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
- কবর জিয়ারত: অনেকেই এই রাতে কবরস্থানে গিয়ে প্রিয়জনদের কবর জিয়ারত করে এবং তাদের জন্য দোয়া করেন।
- সদকা ও দান: এই রাতে গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা এবং সদকা দেওয়া খুবই ফজিলতের কাজ।
শবে বরাতের দিনে রোজা রাখা
শবে বরাতের পরের দিন, অর্থাৎ ১৫ শাবান, রোজা রাখা সুন্নাত। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এই দিনে রোজা রাখতেন এবং সাহাবাদেরও এই রোজা রাখার পরামর্শ দিতেন। রোজা রাখার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি বড় সুযোগ তৈরি হয়।
শবে বরাত উদযাপনের সামাজিক রীতি
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সম্প্রদায় শবে বরাতকে ঘিরে বিভিন্ন সামাজিক রীতি পালন করে থাকে। যেমন:
- আলোর সজ্জা: অনেক এলাকায় মসজিদ, বাড়ি এবং রাস্তা আলোকসজ্জায় সাজানো হয়। মোমবাতি এবং বৈদ্যুতিক বাতির মাধ্যমে পরিবেশকে আলোকিত করা হয়।
- বিশেষ খাবার তৈরি: এই রাতে হালুয়া, রুটি, এবং অন্যান্য মিষ্টান্ন তৈরি করা হয়। প্রতিবেশীদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়।
- পরিবার ও আত্মীয়দের সাথে সময় কাটানো: শবে বরাতের একটি বড় অংশ হলো পরিবার এবং আত্মীয়দের সাথে একত্রিত হয়ে ইবাদত করা এবং ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা।
শবে বরাতের ভুল ধারণা ও কুসংস্কার
শবে বরাতের রাতে ইবাদত করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা ইসলামি শরিয়তে উৎসাহিত করা হয়েছে, তবে কিছু ভুল ধারণা এবং কুসংস্কার সমাজে প্রচলিত রয়েছে। যেমন:
- আতশবাজি বা পটকা ফোটানো: কিছু এলাকায় শবে বরাতের রাতে আতশবাজি ফোটানো হয়, যা ইসলামি শিক্ষা অনুযায়ী সঠিক নয়। এটি শান্তির রাতে অশান্তি সৃষ্টি করে।
- অতিরিক্ত আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন: এই রাতের প্রকৃত অর্থ হলো আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। অযথা বাহুল্যপূর্ণ উদযাপন ইসলামের মূল শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
শবে বরাত মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মহান রাত, যা আত্মশুদ্ধি, ইবাদত এবং আল্লাহর রহমত লাভের অসাধারণ সুযোগ নিয়ে আসে। এ রাতে আমাদের উচিত আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাওয়া, অতীতের ভুলত্রুটির জন্য অনুশোচনা করা, এবং ভবিষ্যতের জন্য সৎ জীবনযাপনের অঙ্গীকার করা। আসুন, এই পবিত্র রজনীকে সঠিকভাবে উদযাপন করে আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর ও অর্থবহ করে তুলি।
Post Comment