শবে বরাত রুটি হালুয়া খাওয়া কি জায়েজ

শবে বরাত রুটি হালুয়া খাওয়া কি জায়েজ

শবে বরাত ইসলামি বর্ষপঞ্জির একটি বিশেষ রাত, যা শাবান মাসের ১৪ তারিখে পালিত হয়। এই রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন এবং ভাগ্য নির্ধারণ করেন বলে অনেকের বিশ্বাস। মুসলিম বিশ্বে এ রাতকে ইবাদত-বন্দেগি ও দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে পালনের প্রবণতা দেখা যায়। তবে কিছু অঞ্চলে শবে বরাতে বিশেষ খাবার, যেমন রুটি, হালুয়া, মাংস রান্না ও বিতরণের প্রচলন রয়েছে। প্রশ্ন হলো, শবে বরাতে রুটি-হালুয়া খাওয়া ও বিতরণ করা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে কতটুকু গ্রহণযোগ্য?

শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

শবে বরাত সম্পর্কে কোরআনে সরাসরি কোনো আলোচনা নেই, তবে হাদিসে কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। অনেক হাদিসে বলা হয়েছে, এ রাতে আল্লাহ বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন এবং রহমতের দরজা খুলে দেন। তিরমিজি, ইবনে মাজাহসহ কিছু হাদিসগ্রন্থে শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে উল্লেখ আছে। তবে অনেক হাদিসের বিশুদ্ধতা নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।

শবে বরাতে খাবার খাওয়া ও বিতরণের ঐতিহ্য

বিশেষ করে উপমহাদেশের দেশগুলোতে শবে বরাত উপলক্ষে রুটি-হালুয়া, মাংস ও অন্যান্য খাবার রান্না করে আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এই রীতি সংস্কৃতিগত এবং ঐতিহ্যগতভাবে গড়ে উঠেছে। অনেকে মনে করেন, এটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যদিও ইসলামে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই।

ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে রুটি-হালুয়া খাওয়া

১. শরিয়তসম্মত কিনা?

ইসলামে হালাল খাবার খাওয়া বৈধ এবং এটি সুন্নাতের পরিপন্থী নয়। তবে নির্দিষ্ট কোনো দিনে বা নির্দিষ্ট কোনো ইবাদতের অংশ হিসেবে তা পালন করা হলে বিদআত হয়ে যেতে পারে। নবী করিম (সা.) এবং সাহাবিদের আমলে শবে বরাতে বিশেষ খাবার খাওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।

২. বিদআতের প্রসঙ্গ

বিদআত অর্থ হলো নতুন কোনো ধর্মীয় প্রথা বা রীতি চালু করা, যা নবী (সা.) ও তাঁর সাহাবিদের আমলে ছিল না। যদি কেউ মনে করেন যে, শবে বরাতে হালুয়া-রুটি খাওয়া বিশেষ ফজিলতপূর্ণ বা ইবাদতের অংশ, তাহলে এটি বিদআত হিসেবে গণ্য হতে পারে। তবে কেউ যদি কেবল পরিবার বা দরিদ্রদের জন্য বিশেষ খাবার প্রস্তুত করেন এবং এটি ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা মনে না করেন, তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই।

৩. দান-সদকার গুরুত্ব

ইসলামে গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা এবং খাবার দান করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বারবার গরিবদের প্রতি সদয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই শবে বরাত বা অন্য যেকোনো দিন যদি কেউ খাবার বিতরণ করেন, তবে এটি সওয়াবের কাজ হবে। তবে এটি বাধ্যতামূলক বা বিশেষ কোনো ধর্মীয় ফজিলতপূর্ণ কাজ হিসেবে মানা ঠিক হবে না।

শবে বরাতে রুটি-হালুয়া খাওয়া বা বিতরণ করা ইসলামে সরাসরি নিষিদ্ধ নয়, তবে যদি এটি ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা বা ইবাদতের অংশ হিসেবে পালন করা হয়, তাহলে এটি বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। ইসলামে মূলত এই রাতটি ইবাদত, কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ ও দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে কাটানো উত্তম। তাই আমাদের উচিত, শবে বরাতের প্রকৃত গুরুত্ব বোঝা এবং নির্ভেজাল ইসলামি চেতনার সঙ্গে এই রাত পালন করা।

Post Comment

You May Have Missed