শবে বরাত এর পিক 2025
শবে বরাত, যা ফার্সি ভাষায় “শব” অর্থাৎ রাত এবং “বরাত” অর্থাৎ মুক্তি বা ভাগ্য থেকে উদ্ভূত, ইসলামী ক্যালেন্ডারের শাবান মাসের ১৪তম রাতকে নির্দেশ করে। এই রাতটি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা বহন করে, যা আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত এবং নিকটবর্তী হওয়ার এক মহিমান্বিত সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হয়।
শবে বরাতের তাৎপর্য ও গুরুত্ব:
শবে বরাতের আরবি পরিভাষা “লাইলাতুল বারাআত”, যার অর্থ মুক্তির রাত। বিশ্বাস করা হয় যে, এই রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ দয়া ও ক্ষমা প্রদর্শন করেন। হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে, শাবান মাসের মধ্যরাতে আল্লাহ পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে বলেন: “আছে কি কেউ ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কেউ রিজিক প্রার্থী? আমি তাকে রিজিক দেব। আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে মুক্তি দেব।” তবে, হাদিসের বিশুদ্ধতা নিয়ে আলেমদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে।
শবে বরাত ২০২৫ সালে:
বাংলাদেশের আকাশে ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ শুক্রবার পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা গেলে, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শনিবার থেকে শাবান মাস শুরু হবে। সেই হিসেবে, শবে বরাত পালিত হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার দিবাগত রাতে।

শবে বরাতের ইবাদত ও আমল:
শবে বরাতের রাতে মুসলিমরা বিশেষ ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হন। নিম্নোক্ত আমলগুলো এই রাতে করা যেতে পারে:
-
নফল নামাজ: এশার নামাজের পর দুই রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করা যেতে পারে। কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই; ইচ্ছামতো পড়া যেতে পারে।
-
কুরআন তিলাওয়াত: এই রাতে বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত।
-
জিকির ও দোয়া: আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ জপা এবং নিজের ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা।
-
তওবা ও ইস্তিগফার: নিজের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
-
কবর জিয়ারত: অনেকে এই রাতে মৃত আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করে থাকেন।
শবে বরাতের রোজা:
শবে বরাতের পরের দিন, অর্থাৎ ১৫ শাবান, নফল রোজা রাখা সুন্নত হিসেবে বিবেচিত হয়। হাদিসে এসেছে, প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) শাবান মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন।

শবে বরাত পালনের সময় সতর্কতা:
শবে বরাত উপলক্ষে কিছু অনভিপ্রেত প্রথা প্রচলিত রয়েছে, যেমন আতশবাজি ফোটানো, বিশেষ খাবার প্রস্তুত করা ইত্যাদি। এসব থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এগুলো ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী সমর্থিত নয়। বরং এই রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করা উচিত।
শবে বরাত মুসলিম উম্মাহর জন্য আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের একটি বিশেষ সুযোগ। এই রাতে ইবাদত, তওবা ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভের চেষ্টা করা উচিত। তবে, ইবাদতের ক্ষেত্রে কোনো বাড়াবাড়ি বা নতুন প্রথা সংযোজন থেকে বিরত থেকে সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা সর্বোত্তম।
Post Comment